Published - Sat, 06 May 2023

Break Even Point - ব্রেক ইভেন ফর্মুলা দিয়ে ব্যবসায়ের মুনাফা পরিমাপ করুন

Break Even Point - ব্রেক ইভেন ফর্মুলা দিয়ে ব্যবসায়ের মুনাফা পরিমাপ করুন

ব্যবসায়ীদের সব সময় চিন্তা থাকে তাদের ব্যবসায়ে লাভ না ক্ষতি হচ্ছে? আর এই লাভ ক্ষতি পরিমাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাদের বিভিন্ন রকম ফাইন্যন্সিয়াল টুলস ব্যবহার করতে হয়। আর এমনই একটি টুল হলো ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট। এটা ব্যবহার করে খুব সহজেই খুঁজে বের করা যায় ঠিক কতটুকু প্রোডাক্ট বিক্রি করার পর একটা ব্যবসায়ে লাভের মুখ দেখা যাবে। এক কথায় ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট হল এমন একটা সংখ্যা যে পরিমান বিক্রি করলে ব্যবসায়ের মোট আয় এবং মোট খরচ সমান হবে। (স্থির এবং পরিবর্তনশীল)। অর্থাৎ এই স্টেজে একটি কোম্পানির লাভ এবং ক্ষতির পরিমান হয় শূন্য। সাধারনত ছোট ব্যবসায়ীরা নিজেদের পন্যের দাম ঠিক করতে ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট টুলস ব্যবহার করে। এছাড়া এর মাধ্যমে, স্থায়ী  কিংবা পরিবর্তনশীল ব্যয় কীভাবে প্রোডাক্টের দাম নির্ধারনে ইম্প্যাক্ট রাখে তা বোঝা যায়।

আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী বা ফাইন্যন্স প্রফেশনাল হন, আপনাকে অবশ্যই ব্রেক-ইভেন পয়েন্টের কাজ বুঝতে হবে। জানতে হবে এটা ঠিক কীভাবে লাভ এবং পন্যের মূল্য বিশ্লেষণ করে। আশা করছি এই আর্টিকেল আপনাকে ব্রেক ইভেন পয়েন্টের ব্যপারে বেশ ভালো একটা ধারনা দিবে।


ব্রেক ইভেন পয়েন্ট ক্যালকুলেশনের ফর্মুলা
একটি কোম্পানির ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট গণনা করা হয় তার মোট খরচ শোধ করতে ঠিক কি পরিমান পন্য বিক্রয় করতে হবে তা বের করার জন্য। নিচের সূত্র ব্যবহার করে এটা গণনা করা হয়:

ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট (ইউনিট এককে) = মোট ফিক্সড কস্ট / (বিক্রয় মূল্য প্রতি ইউনিট – ভ্যারিয়েবল কস্ট প্রতি ইউনিট)

এই সুত্র ব্যবহার করে ধরেন আপনি উত্তর পেলেন ১০০০। সেক্ষেত্রে কোন লাভ কিংবা ক্ষতি বহন করা ছাড়া যদি আপনি ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনাকে এক হাজার পিস প্রোডাক্ট বিক্রী করতে হবে। যদি কোম্পানী BEP’র চেয়ে বেশি বিক্রি করে তাহলে তারা মুনাফা করবে। আর যদি কম বিক্রী করে তাহলে বুঝতে হবে কোম্পানিটির ক্ষতি হয়েছে। আর এই হিসেব করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কোম্পানির ফিক্সড কস্ট, পার প্রোডাক্ট ভ্যারিয়েবল কস্ট এবং পন্যের মুল্য জানতে হবে।


কিভাবে একটি বিজনেসের ব্রেক ইভেন ক্যালকুলেট করা হয়
সাধারনত ব্যবসায়ীরা ব্রেক-ইভেন নির্নয় করে, তাদের পণ্যের মূল্য নির্ধারণের জন্য। এছাড়া খরচ বুঝে মুনাফা অর্জনের জন্য কী পরিমান বিক্রয় করতে হবে সেটা ও হিসেব করে এই পদ্ধতিতেই। আমরা একটি উদাহরণ দিয়ে এটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো;

ধরুন, XYZ একটা কোম্পানি। তাদের একটা পন্য আছে নাম A। এবং এটার দাম ২৫০ টাকা। প্রতি ইউনিট পন্য তৈরি এবং বিক্রয়ে খরচ হয় ৬০ টাকা। এছাড়া, XYZ কোম্পানির ফিক্সড কস্ট ৫০ লাখ টাকা।  তাদের ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট হিসাব করতে হবে:

বিইপি(একক) = ৫০০০০০০ / (২৫০-৬০) = ২৬,৩১৬ ইউনিট

এবং টাকার হিসেবে তাদের বিইপি = ২৬৩১৬ ইউনিট x ২৫০ = ৬৫,৭৯,০০০

অর্থাৎ, ব্রেক ইভেন অনুযায়ী XYZ কোম্পানিকে যদি মুনাফা করতে হয় তাহলে ২৬,৩১৬ ইউনিটের বেশি বিক্রি করতে হবে। কিন্তু দেখা গেলো এত বেশি প্রোডাক্ট বিক্রী করার সক্ষমতা এই মুহুর্তে XYZ’র নেই। তাহলে তারা কি করবে? সেক্ষেত্রে নিচের কাজ গুলো করা যেতে পারে।

  • স্থায়ী খরচ বা ফিক্সড কস্ট কমানোর চেষ্টা করা (ওভারহেড খরচ, ভাড়া ইত্যাদি কমানো)

  • পরিবর্তনশীল খরচ বা ভ্যারিয়েবল কস্ট কমানোর চেষ্টা করা। (মজুরি, কাঁচামালের খরচ ইত্যাদি কমানো)

  • পণ্যের বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধি করা

এই তিনটা স্টেপ নেওয়ার মাধ্যমে খরচ কমিয়ে ব্রেক ইভেন কমানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে XYZ কে মুনাফা অর্জনের জন্য হয়তো আগের মত অত বেশি পন্য বিক্রী করতে হবেনা । মুলত এরকম বিভিন্ন আগাম সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজে ব্রেক ইভেন এনালাইসিস ব্যবহার করা হয়। যেটা ব্যবসায়ের কার্যকারিতা বহুগুনে বৃদ্ধি করে।

 

বিজনেসে ব্রেক ইভেন অ্যানালাইসিস ব্যবহার করার সুবিধাগুলো কি কি?
ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস ব্যবসায়িদের ব্যবসায় পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়া সহজতর করে। উদাহারনস্বরূপ;

  • একটা বিজনেস এক্স্যাক্ট কখন ব্রেক ইভেন ম্যাচ করে মুনাফা শুরু করবে।

  • মুনাফা তৈরিতে মার্কেটিং কেমন ইম্প্যাক্ট ফেলে সেটা বুঝা যায়।

  • সেলসের সাথে খরচ এবং মুনাফার  সম্পর্কটা কেমন। এছাড়া ব্রেক ইভেন ওভারঅল বিজনেসের একটা ফাইন্যন্সিয়াল এনালাইসিস করে।
     

ব্রেক ইভেন অ্যানালাইসিসের অসুবিধাগুলো কি কি?
যদিও ব্রেক-ইভেন ফর্মুলা ব্যবসায়ীদের প্রোডাক্ট প্রাইস, ফিক্সড কস্ট এবং মোট মুনাফার ব্যপারে অনুমান করতে সাহায্য করে। তারপর ও কিছু জিনিস আছে  যা ব্রেক ইভেন দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। ফলে এর  কিছু সীমাবদ্ধতা ও আছে:

  • ব্রেক-ইভেন এনালাইসিস শুধু খরচের একটা ধারনা দেয়। কিন্তু কত টাকা প্রাইস সেট করলে ব্যবসায়ের বিক্রিবাট্টা বাড়তে পারে এমন কোন ডেটা দেয়না।

  • ব্রেক-ইভেনে অনুমান করা হয় স্থায়ী খরচ এবং পরিবর্তনশীল খরচ প্রত্যেক ইউনিটের জন্যে একই। তবে বাস্তবে শ্রমিকদের বেতন বিভিন্ন ইউটিলিটিজ বিল যেকোন সময় বাড়তে পারে।

  • ব্রেক-ইভেনে অনুমান করা হয় যা উৎপাদন হবে সব বিক্রী হয়ে যাবে। অর্থাৎ ইনভেন্টরি বলতে কিছুই নাই। যা বাস্তব জীবনে অসম্ভব।

  • এছাড়া একটা কোম্পানি একাধিক প্রোডাক্ট উৎপাদন করলে ব্রেক ইভেন এনালাইসিস খুব বেশি কাজে দেয়না।

এক কথায় বললে, ব্যবসায়ের কস্ট ম্যানেজমেন্ট, সেলস এবং মুনাফা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে ব্রেক ইভেন কাজে লাগে। কিন্তু ভালো সিদ্ধান্তের জন্য অন্যন্য ফাইন্যান্সিয়াল টুলসগুলো একত্রে ব্যবহার করতে হবে।

Comments (1)

Mahmudul Hoque Tareq
Mahmudul Hoque Tareq
Thank you. Very informative.
Tue, 09 May 2023