Published - Sun, 09 Mar 2025    View - 282 times

অডিট ম্যাটেরিয়ালিটি (Audit Materiality) এবং পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটি (Performance Materiality)

অডিট ম্যাটেরিয়ালিটি (Audit Materiality) এবং পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটি (Performance Materiality)

অডিট ম্যাটেরিয়ালিটি (Audit Materiality)

 

অডিট ম্যাটেরিয়ালিটি (Audit Materiality) মানে হলো, কোনো প্রতিষ্ঠানের ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস এ উল্লেখ করা ট্রান্সজেকশনে হিসাবে ভুল বা তথ্যের হেরফের কতটা গুরুতর, তা বিচার করা। সোজা কথায়, কোনো ভুল বা তথ্য লুকানো থাকলে তা যদি কোম্পানির স্টেকহোল্ডারদের (যেমন: শেয়ারহোল্ডার, বিনিয়োগকারী, ঋণদাতা ইত্যাদির) সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে, তাহলে সেটাকে Material ধরা হয়।

 

যেমন:

 

✔ ধরুন, একটি কোম্পানির মোট টাকার পরিমাণ ১০০ কোটি। সেখানে যদি ৫,০০০ হাজার টাকার ভুল হয়, তাহলে সেটা তেমন বড় কিছু নয়। এটা হয়তো কোম্পানির স্টেকহোল্ডারদের সিদ্ধান্তে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তাই এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।

 

✔ কিন্তু যদি ৫ কোটি টাকার ভুল হয়, তাহলে সেটা অনেক বড় ব্যাপার। এটা কোম্পানির স্টেকহোল্ডারদের সিদ্ধান্তে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

অডিটররা সাধারণত কিছু নিয়ম ব্যবহার করে এই গুরুত্বটা মাপেন। যেমন, আয়, সম্পদ, লাভ বা ক্ষতির একটা নির্দিষ্ট অংশ। এই অংশটা ঠিক করার জন্য অডিটররা তাদের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করেন।

 

অডিটররা ম্যাটেরিয়ালিটি নির্ধারণে সাধারণত দুটি দিক বিবেচনা করেন:

 

1. Quantitative Materiality: এখানে একটি নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজ বা পরিমাণের ভিত্তিতে ম্যাটেরিয়ালিটি নির্ধারণ করা হয়।

2. Qualitative Materiality: সংখ্যানির্ভর না হয়ে প্রভাবের গুরুত্ব বিবেচনা করা হয়। তার মানে কোয়ালিটেটিভ বিষয়গুলোকে ফোকাস করা হয় এখানে।

 

Quantitative Materiality (পরিমাণগত ম্যাটেরিয়ালিটি) - উদাহরণসমূহ

 

পরিমাণগত ম্যাটেরিয়ালিটি নির্ধারণের কিছু সাধারণ পদ্ধতি:

 

✔ আয় (Revenue) এর উপর: মোট আয়ের ০.৫% বা ১%।

 

✔ মোট সম্পদ (Total Assets) এর উপর: মোট সম্পদের ১% বা ২%।

 

✔ নিট লাভ (Net Income) এর উপর: নিট লাভের ৫% বা ১০%।

 

উদাহরণ ১: নিট মুনাফার ভিত্তিতে ম্যাটেরিয়ালিটি

XYZ Ltd. কোম্পানির আর্থিক বিবরণী থেকে তথ্য:

 

বিবরণ

টাকা

মোট সম্পদ

৫০০ কোটি

মোট আয়

১,০০০ কোটি

নিট মুনাফা

৫০ কোটি

 

অডিটর সিদ্ধান্ত নিলেন যে, ম্যাটেরিয়ালিটি থ্রেশোল্ড = নিট মুনাফার ৫% হবে।

Materiality Limit = ৫০ কোটি × ৫% = ২.৫ কোটি

 

এখন, যদি কোনো error বা misstatement হয়:

 

✔ যদি ১.৫ কোটি টাকার ভুল ধরা পড়ে → এটি Immaterial, কারণ এটি ২.৫ কোটির কম।

 

✔ যদি ৩.০ কোটি টাকার ভুল ধরা পড়ে → এটি Material, কারণ এটি ২.৫ কোটির বেশি এবং আর্থিক বিবরণীতে significant impact ফেলতে পারে।

 

উদাহরণ ২: মোট সম্পদের ভিত্তিতে ম্যাটেরিয়ালিটি

ABC Ltd. কোম্পানির মোট সম্পদ টাকা ২০০ কোটি।

অডিটর ম্যাটেরিয়ালিটি থ্রেশোল্ড ১% নির্ধারণ করেছেন।

তাহলে, Materiality Limit = ২০০ কোটি × ১% = টাকা ২ কোটি।

 

✔ যদি ১.৫ কোটি টাকার ভুল হয়** → এটি Immaterial

 

✔ যদি ২.৫ কোটি টাকার ভুল হয়** → এটি Material

 

উদাহরণ ৩: মোট রাজস্বের ভিত্তিতে ম্যাটেরিয়ালিটি

PQR Ltd. কোম্পানির মোট রাজস্ব টাকা ৫০০ কোটি। অডিটর সিদ্ধান্ত নিলেন ম্যাটেরিয়ালিটি থ্রেশোল্ড হবে ০.৫%।

তাহলে, Materiality Limit = ৫০০ কোটি × ০.৫% = টাকা ২.৫ কোটি।

 

✔ যদি ১ কোটি টাকার ভুল হয়** → এটি Immaterial

 

✔ যদি ৩ কোটি টাকার ভুল হয়** → এটি Material

 

 

Qualitative Materiality (গুণগত ম্যাটেরিয়ালিটি) - উদাহরণসমূহ

গুণগত ম্যাটেরিয়ালিটি এমন ভুল বা তথ্য গোপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যা সংখ্যানির্ভর নয়, বরং আইনি, নৈতিক বা ব্যবসায়িক প্রভাব ফেলে।

 

উদাহরণ ১: আইনি মামলা প্রকাশ না করা

XYZ Ltd. একটি বড় আইনি মামলার সম্মুখীন হয়েছে, যার সম্ভাব্য ক্ষতি ১ কোটি টাকা। যদিও পরিমাণগত দিক থেকে এটি ছোট, তবে কোম্পানির আইনি ঝুঁকি এবং বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

 

✔ এটি Material Misstatement হিসেবে ধরা হবে।

 

উদাহরণ ২: ঋণ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা

ABC Ltd. একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, যেখানে শর্ত ছিল যে কোম্পানির ঋণ-ইকুইটি অনুপাত ২:১ এর বেশি হবে না। কোম্পানি এই অনুপাত অতিক্রম করেছে কিন্তু বিনিয়োগকারীদের কাছে তথ্য প্রকাশ করেনি।

 

✔ এটি Material Misstatement, কারণ এটি ঋণদাতাদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।

 

উদাহরণ ৩: কৌশলগত ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন গোপন করা

PQR Ltd. কোম্পানির CEO হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন, যা কোম্পানির ভবিষ্যত পরিচালনার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কোম্পানি এই তথ্য প্রকাশ করেনি।

 

✔ এটি Material Misstatement, কারণ এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

 

 

পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটি (Performance Materiality)

পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটি হল অডিট ম্যাটেরিয়ালিটির একটি নিম্ন স্তর, যা নির্ধারণ করা হয় যাতে একাধিক ছোট ছোট ভুল (aggregated errors) মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে আর্থিক বিবরণীতে বড় ভুল না হয়।

 

পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটি হিসাব করার পদ্ধতি

সাধারণত, পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটি অডিট ম্যাটেরিয়ালিটির ৫০% থেকে ৭৫% এর মধ্যে রাখা হয়।

 

বিবরণ

টাকা

নির্ধারিত অডিট ম্যাটারিয়্যালিটি

২.৫ কোটি

পারফর্মেন্স ম্যাটারিয়্যালিটি (৭০%)

১.৭৫ কোটি

 

পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটির উদাহরণসমূহ

 

উদাহরণ ১: ছোট ছোট ভুলের সম্মিলিত প্রভাব

XYZ Ltd.-এর আর্থিক বিবরণীতে বিভিন্ন খাতের ছোট ছোট ভুল রয়েছে:

 

✔ ভুল কর মওকুফ (Error in Tax Relief): টাকা ৫০ লাখ

 

✔ বিক্রয় রাজস্বের ভুল (Error in Sales Revenue): টাকা ৬০ লাখ

 

 ভাড়া ব্যয়ের ভুল (Error in Rental Expense): টাকা ৭০ লাখ

 

মোট = (৫০ + ৬০ + ৭০) লাখ = ১.৮ কোটি (যা পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটি ১.৭৫ কোটির বেশি)

 

✔ তাই এটি Material Misstatement

 

উদাহরণ ২: বিভিন্ন শাখায় ছোট ছোট ভুল

ABC Ltd. একটি বহুজাতিক কোম্পানি। অডিট চলাকালে দেখা গেল যে বিভিন্ন শাখায় ছোট ছোট ভুল হয়েছে, যা একত্রে ২ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে, যা পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটির সীমা অতিক্রম করেছে।

 

✔ এটি Material Misstatement, যা সংশোধন করা দরকার।

 

উদাহরণ ৩: ব্যয় কম দেখানো

PQR Ltd. মুনাফা বেশি দেখানোর জন্য কিছু ব্যয় গোপন করেছে, যার সম্মিলিত প্রভাব পারফরম্যান্স ম্যাটেরিয়ালিটির সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

 

✔ এটি Material Misstatement, যা সংশোধন করা দরকার।

 

কাজেই, Audit Materiality নির্ধারণ করে কোন ভুলগুলো ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস এ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।  আর Performance Materiality সেটির একটি নিরাপত্তা সীমা যা ছোট ভুলগুলোর সম্মিলিত প্রভাব বিশ্লেষণ করে।

 

অন্যদিকে, অডিটরদের প্রধান কাজ হলো ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস ব্যবহারকারীদের জন্য সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করা। তারা নিশ্চিত করে যে, ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস এ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভুল বা তথ্যের ঘাটতি নেই, যা ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস ব্যবহারকারীদের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করতে পারে। এর মাধ্যমে অডিটররা ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্টসগুলোর স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখেন।

 

উদাহরণ: ঋণ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা – বিস্তারিত বিশ্লেষণ

ABC Ltd. একটি ব্যাংক থেকে টাকা ১০০ কোটি লোন নিয়েছে। লোন চুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল যে কোম্পানির ঋণ-ইকুইটি অনুপাত (Debt-to-Equity Ratio) ২:১ এর বেশি হওয়া চলবে না।

 

ঋণ-ইকুইটি অনুপাতের ব্যাখ্যা

ঋণ-ইকুইটি অনুপাত হল কোম্পানির মোট ঋণ এবং শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির অনুপাত, যা কোম্পানির আর্থিক স্থিতিশীলতা বোঝাতে সাহায্য করে।

 

Debt-to-Equity Ratio = Total Debt / Total Equity

 

ধরুন, ABC Ltd.-এর আর্থিক অবস্থা ছিল নিম্নরুপ:

মোট ঋণ (Total Debt) = ১০০ কোটি টাকা

মোট ইকুইটি (Total Equity) = ৫০ কোটি টাকা

= Debt-to-Equity Ratio = (১০০ / ৫০) = ২:১

 

এটি লোন চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য।

 

সমস্যার সূত্রপাতঃ চলতি বছরে ABC Ltd. বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হয় এবং তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটি হ্রাস পেয়ে টাকা ৪০ কোটি হয়ে যায়, কিন্তু তারা নতুন কোনো শেয়ার মূলধন সংগ্রহ করেনি। ফলে নতুন ঋণ-ইকুইটি অনুপাত হয়ঃ

 

Debt-to-Equity Ratio = (১০০ / ৪০) = ২.৫ : ১

 

এখন, এই অনুপাত চুক্তির সীমা **২:১** এর বেশি হয়ে গেছে, যার ফলে ABC Ltd. ঋণের শর্ত ভঙ্গ করেছে (Covenant Violation).

 

কোম্পানির ভুল

ABC Ltd. এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের এবং ব্যাংককে জানায়নি এবং আর্থিক বিবরণীতে এটি প্রকাশ করেনি। এর ফলে:

 

✔ ঋণদাতারা ঝুঁকির মুখে পড়েছেঃ ব্যাংক যদি এই তথ্য জানত, তবে হয়তো তারা সুদের হার বাড়িয়ে দিত বা ঋণ পুনর্গঠন করত।

 

✔ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়েছেঃ তারা মনে করছে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা আগের মতোই আছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঋণ নেওয়ার শর্ত ভঙ্গ হওয়ায় কোম্পানির ঋণের সুদের হার বাড়তে পারে বা ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত চাপ আসতে পারে।

 

✔ আইনি ঝুঁকি তৈরি হয়েছেঃ ব্যাংক যদি এই তথ্য গোপন করার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেয়, তবে কোম্পানির ক্ষতি হতে পারে।

 

অডিটররা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখবে?

অডিট চলাকালে অডিটররা কোম্পানির লোন এবং ইকুইটির বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে ঋণ-ইকুইটি অনুপাত ২.৫:১ হয়েছে, যা ব্যাংকের শর্ত লঙ্ঘন করছে। তারা খেয়াল করেন যে, এই তথ্য ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্টস এর নোটস এ উল্লেখ করা হয়নি, যা একটি “Material Misstatement”.

 

অডিটররা তাহলে এখন কোম্পানিকে কি সাজেস্ট করতে পারে?

✔ কোম্পানিকে তাদের Financial Statements-এর নোটসে এই তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

✔ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে কোম্পানিকে লোনের নতুন শর্ত দেয়ার জন্য এডভাইস করা যেতে পারে।

✔ কোম্পানির স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে যাতে তারা কোম্পানির আর্থিক ঝুঁকি সম্পর্কে ইনভেস্টরদের এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারসরা সচেতন হয়।

 

এই ভুল পরিমাণগতভাবে ছোট হলেও (অর্থাৎ ইকুইটি মাত্র টাকা ১০ কোটি কমেছে), এর প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যাংক এবং ইনভেস্টরদের জন্য ভুল তথ্য উপস্থাপন করছে এবং কোম্পানির ফাইনান্সিয়াল ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই, এটি “Qualitative Material Misstatement” হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সংশোধন করা প্রয়োজন।

 

আশাকরি সবাই বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।

Created by

Analyst Skill

Corporate professional with more than 7 years of experience in costing, cash flow planning, budgeting, financial reporting, internal auditing and business analytics. He is a qualified Cost and Management Accountant (CMA) from ICMAB. He has adequate knowledge of advance excel and Power BI to formulate complex financial models, dashboards and analytics. Also, he is founder and chief content creator of Analyst Skill.

  • Founder, CEO and Lead Trainer of Analyst Skill.
  • Professional Accountant - Qualified CMA from ICMAB
  • Working as online trainer in costing, budgeting, financial reporting & analytics domains and already served over 300 participants from different organizations.
  • Currently working at BanglaCAT as Lead Financial Analyst and responsible for managing overall reporting for the business.
  • Prior to that he worked as Costing & Budgeting In-Charge at Gemcon Group and oversaw Meena Sweets, Meena Bazar and Meena Clicks.

View profile

Comments (0)