Published - Sat, 06 May 2023

ফরেনসিক অডিট কি, বিজনেসে এর গুরুত্ব এবং ব্যবহার কেমন?

ফরেনসিক অডিট কি, বিজনেসে এর গুরুত্ব এবং ব্যবহার কেমন?

যে অডিটে যেকোন ব্যবসায়ের ফাইন্যান্সিয়াল রেকর্ডগুলোকে একটা স্ট্রাকচার্ড ওয়েতে অনুসন্ধান করে জালিয়াতি খুজে বের করার চেষ্টা করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে কোর্টে উথাপনের জন্য প্রমানপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করা হয় তাকে ফরেনসিক অডিট বলে। এটা কোম্পানির আভ্যন্তরীন অডিট থেকে কিছুটা ভিন্ন। এবং যে ব্যক্তি এই অডিট করে তাকে একাউন্টিং এবং অডিটিং এর বাইরে ও দেশে প্রচলিত ব্যবসা এবং অর্থ সংক্রান্ত আইন-কানুনের ব্যপারে এক্সপার্ট হতে হয়।


ফরেনসিক অডিট করার কারণগুলো সাধারণত কি কি?
নিচে উল্লেখ করা কারনগুলোর ফলে যেকোন ব্যবসায়ের ফরেনসিক অডিট বাধ্যতামুলক হতে পারেঃ

A blue triangle with white text

Description automatically generated with low confidence

 

 

 

 

 

 

 

 

 

  1. Conflict of Interest (স্বার্থের দ্বন্দ্ব)
    ব্যবসায়ের একটা নীতি ব্যক্তি স্বার্থের আগে প্রাতিষ্টানিক স্বার্থ প্রাধান্য পাবে। কিন্তু প্রতিষ্টানে কর্মরত কেউ যখন নিজ পদের প্রভাব প্রতিপত্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করে এবং এর ফলে প্রতিষ্টান কোন ক্ষতির সম্মুখীন হয় তখন ফরেনসিক অডিটের বিষয়টা সামনে আসে।

    যেমন, একজন ম্যানেজার ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে কোন কর্মচারীকে অতিরিক্ত খরচের অনুমোদন কিংবা কিছু অতিরিক্ত সুবিধা দিচ্ছে। যদিও এই ক্ষেত্রে ওই ম্যানেজার ব্যক্তিগত ভাবে ফাইন্যান্সিয়াল বেনিফিট পাচ্ছেনা কিন্তু সে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবিধা নিচ্ছে।
     
  2. Bribe (ঘুষ)
    আসলে ঘুষ কাকে বলে সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা একটু কষ্টকর। কারন আপনারা সবাই ইতিমধ্যে জানেন, প্রাতিষ্টানিক পর্যায়ে যখন কোন সিদ্ধান্ত দামি গিফট কিংবা অর্থের বিনিময়ে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় তখন তাকে ঘুষ বলে।

    ধরেন, আপনার ক্রয় বিভাগ একাধিক ভালো অফারিং থাকা স্বত্বে ও সব বাদ দিয়ে মিঃ এক্স কে অর্ডার দিলো। কারন মিঃ এক্স ক্রয় বিভাগের ম্যানেজারকে একটা দামী ঘড়ি গিফট করেছে। এটাকে কী ঘুষ বলবেন না অন্য কিছু?
     
  3. Misappropriation of Assets
    এটা আসলে সবচেয়ে কমন সমস্যাগুলোর একটা। আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায় কর্মচারীরা ব্যবসায়ের যেকোন হিসাবনিকাশকে একটু এদিক সেদিক করে নিজে বেনিফিট নিচ্ছেন।

    একটু বুঝিয়ে বলি ধরেন মিঃ এক্স নিজ কোম্পানির জন্য স্টেশনারি ক্রয়ের দায়িত্ব পেলেন। তিনি কিনলেন ১০০০০ টাকার কিন্তু বিলে দেখালেন ১২০০০ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানির বিল ব্যবহার করে তিনি অতিরিক্ত ২০০০ টাকা আদায় করে নিলেন এটাই আসলে মিস এপ্রোপ্রিয়েশন অব এসেট।
     
  4. Misrepresentation of Financial Statement (আর্থিক বিবরনীর ভুল উপস্থাপন)
    এই ধরনের প্রতরনা হয় কোম্পানির উচ্চপর্যায়ে। এখানে আসলে কোম্পানির আসল অবস্থাকে লুকিয়ে একটু বেটার সিচুয়েশন দেখানো হয় যাতে ইনভেস্টরেরা ইনভেস্ট করতে বেশি আগ্রহী হন। কিংবা খুব সহজেই ব্যংক কিংবা অন্যন্যরা লোন দিয়ে দেয়। এছাড়া টপ ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ের পারফরম্যন্সের উপর বোনাস পায়। তাই যদি অতিরিক্ত মুনাফা বা এমন সিচুয়েশন দেখানো হয় তাদের বোনাসের পরিমান বেড়ে যায়। উদাহারনস্বরূপ আপনারা কুরিন সঞ্চিতির কথা ভাবতে পারেন। বাস্তবে সঞ্চিতি দেখানো দরকার ছিলো ২ লাখ দেখালেন ৫০০০০ অর্থাৎ মুনাফা দেড় লাখ বেশি দেখানো হলো।
     
  5. Other Situations (অন্যন্য)
    আসলে ঝুকিপুর্ন যেকোন পরিস্থিতিতে ফরেনসিক অডিট হতে পারে। মুলত একটা জায়গায় প্রতরনা হওয়ার সম্ভবনা কত বেশি তার উপর ভিত্তি করে এই অডিট করা হয়। যখন কোন কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে কেউ অভিযোগ করে কিংবা তারা নিজেরাই মার্জার বা একুইজিশন প্রসেসে যায় তখন এই ধরনের ফরেনসিক অডিট বেশি হয়। অডিটে প্রাপ্ত প্রমানাদি আদালতে উথাপন করা হয়।

    ধরেন, একট নির্দিষ্ট প্যাটেন্টের জন্য দুইটা কোম্পানির মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা গেলো। এবং তারা অভিযোগ নিয়ে আদালতে গেলো এই ক্ষেত্রে ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে জাজ বুঝতে পারবেন এই উদ্ভাবনে কাদের অবদান বেশি। রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টে কে বেশি খরচ করেছে। এবং আসলে কোন পক্ষের ক্ষতিপুরন পাওয়া উচিত।

    দুটি কোম্পানির মধ্যে যখন একুইজিশন বা মার্জ হয় অথবা তারা যখন শেয়ার বাজারে শেয়ার ছাড়ে তখন ফরেনসিক অডিট দরকার হয়। এক্ষেত্রে তারা একটা স্বাধীন অডিট ফার্মের সাথে চুক্তি করে। এবং তারাই প্রয়োজনীয় ফরেনসিকের কাজ কারবার করে।

 

ফরেনসিক অডিট করার স্টেপসগুলো কি কি?
ফরেনসিক অডিটের চারটা ধাপ আছে:

1. Planning the Investigation (তদন্ত পরিকল্পনা)
ফরেনসিক অডিটর টিম শুরুতেই পুরো অডিটের জন্য একটা পরিকল্পনা সাজায়। সেই সাথে তারা ঠিক করে নেয় এই ফরেনসিক করার ক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্যটা কী? উদ্দেশ্য হতে পারেঃ

  • প্রতারণা করা হচ্ছে কিনা তা শনাক্ত করা
  • প্রতরনা কখন করা হয়েছে ?
  • প্রতারণার কারণ কী?
  • জালিয়াতির সাথে জড়িত কারা?
  • জালিয়াতির ফলে আর্থিক বা অনার্থিক কী কী ক্ষতি হয়েছে?
  • আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রমান সংগ্রহ।
  • ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধে পরামর্শ
     

2. Collecting Evidence (প্রমান সংগ্রহ)
প্রমান পত্র সংগ্রহ করা ফরেনসিকের খুবই গুরুত্বপুর্ন কাজ। মুলত জালিয়াতি নিশ্চিত হওয়ার পর ফরেনিওসিক অডিটর টিম জালিয়াতির বিপক্ষে যথেষ্ট পরিমান তথ্য প্রমান সংগ্রহের চেষ্টা করে। কোন ধরনের ডকুমেন্ট আদালতে গৃহীত হবে সেটা ও বিবেচ্য বিষয়।

ধরেন কাচামাল সংগ্রহের জন্য একজন ভেন্ডরকে অর্ডার দেওয়া হলো। কিন্তু মনে হচ্ছে এই অর্ডারে কিছু গড়মিল আছে। হতে পারে কোন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এই অর্ডার দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে অডিটর নিচের বিষয় গুলো নিরীক্ষা করবে।

  • এই বিক্রেতাকে কে অনুমোদন করেছেন?
  • অর্ডার নিশ্চিত করার সময় কোম্পানির পলিসি কী ফলো করা হয়েছে?
  • অন্যন্য ভেন্ডরদের কাছ থেকে কোটেশন নেওয়া হয়েছে
  • যদি নেওয়া হয় সেক্ষেত্রে কী আদোউ সেগুলো দাম এবং কোয়ালীটি অনুযায়ী মুল্যায়িত হয়েছে?
  • অর্ডার চুড়ান্ত করার পর ভেন্ডর কী এস পার কন্ট্র্যাক্ট কোয়ালিটি মেইনটেইন করেছে?
     

3. Reporting (রিপোর্টিং)
উপরের ধাপগুলো শেষ করার একজন ফরেনসিক অডিটর পুরো অডিটের সামারি আকারে একটা রিপোর্ট করবেন। এবং সেটা প্রেজেন্ট করবেন ম্যানেজমেন্ট কিংবা ক্লায়েন্টের কাছে। এই রিপোর্টে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো থাকতে পারে।

  • নিরীক্ষা চলাকালীন পর্যবেক্ষণ/অনুসন্ধান।
  • জালিয়াতি প্রমানে যেসব প্রমানপত্র পাওয়া গিয়েছে।
  • কোম্পানির কতটুকু ক্ষতি হয়েছে।
  • কিভাবে জালিয়াতি হয়েছে।
  • এ ধরনের প্রতারণা বন্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত

প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, ব্যবস্থাপনা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিবে তারা কী আদৌ আইনী প্রক্রিয়ায় যাবে নাকি বিষয়টা এখানেই শেষ করবে।
 

4. Court Proceedings (আদালতের কাজ)
ধরে নিলাম অডিতে খুব ভালো ভাবে জালিয়াতির প্রমান পাওয়া গিয়েছে এবং ব্যবস্থাপনা পরিষদ  ফরেনসিক অডিট রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেক্ষেত্রে, কীভাবে জালিয়াতি হয়েছে এবং প্রমাণগুলি কীভাবে এই জালিয়াতি প্রমান করে তা ব্যাখ্যা করার জন্য অডিটরকেও আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে। এক কথায় সেখানে ফরেনসিক অডিটর হিসাব নিকাশের  জালিয়াতিকে মানুষের সামনে খুব সহজ ভাবে তুলে ধরবে।

 

Forensic Audit vs. Internal Audit( আভ্যন্তরীণ অডিট বনাম ফরেনসিক)

Forensic Audit

Internal Audit

১. ফরেনসিক অডিট করা হয় কোম্পানির মধ্যকার জালিয়াতি খুজে বের করার জন্য।

১. কোম্পানীর একাউন্টিং পলিসিতে কোন নীতির ব্যাত্যায় আছে কিনা তা খুজে বের করার চেষ্টা করা হয়।

2. ফরেনসিক অডিটরদের আইন কানুন সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা থাকতে হবে।

2. আভ্যন্তরীন অডিটরের জন্য আইন সংক্রান্ত গয়ান থাকা জরুরী না।

3. আইনী কাজকারবারে ফরেনসিক অডিট ব্যবহার হতে পারে।

3. আভ্যন্তরীন অডিটের তথ্য প্রমান আদালতে গ্রহনযোগ্য নয়।

4.ফরেনসিক অডিট বাধ্যতামুলক যখন এটা প্রতীয়মান হয় যে কোন একজন কর্মী নিজের স্বার্থে কোম্পানিতে কোন একটা জালিয়াতি করেছে।

4. অডিট নিয়মিত ভাবেই করা হয় যে কোম্পানির একাউন্টিং  পলিসি কিংবা স্ট্যান্ডারডে কোন ভুল আছে কিনা তা দেখতে।

 


সারমর্ম (Conclusion)
ফরেনসিক অডিট দরকার হয় প্রতরনা বা ডকুমেন্ট মিসপ্রেজেন্টেশনের মত বিশেষ অপরাধ গুলো খুজে বের করার জন্য। এখানে অতীতের বিভিন্ন ট্রানজেকশন এবং ডেটা এনালাইসিস করে জালিয়াতি প্রমানের স্বপক্ষে প্রমান খুজে বের করার চেষ্টা করা হয়। অন্যদিকে আভ্যন্তরীন অডিট কোম্পানির স্বাভাবিক কার্যক্রম। এখানে চেষ্টা করা হয় কোম্পানির কোন একাউন্টিং পলিসিতে ভুল আছে কিনা কিংবা সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে চলছে কিনা তা তদারকি করার জন্য।

 

Comments (0)