Published - Sun, 21 May 2023

বিজনেসের ক্যাশ ফ্লো কিভাবে ইমপ্রুভ করা সম্ভব?

বিজনেসের ক্যাশ ফ্লো কিভাবে ইমপ্রুভ করা সম্ভব?

আপনার ব্যবসায়ের পরিচালনা কার্যক্রম যত উন্নত করবেন ক্যাশ ফ্লো ও ঠিক ততটাই হেলদি হবে। যদি আপনার ব্যবসায়ে আগত অর্থের পরিমান খরচ হওয়া অর্থ অর্থাৎ নির্গত অর্থের পরিমানের চেয়ে কম হয় তাহলে আমরা তাকে নেগেটিভ ক্যাশ ফ্লো বলি। মাঝেমধ্যে এই নেগেটিভ ক্যাশ ফ্লো-র কারন থাকে কিছু এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর। তবে বেশিরভাগ সময় এর কারন খুজলে দেখা যায় ব্যবসায় পরিচালনায় আমাদের অদক্ষতা কিংবা বিক্রয় এবং খরচের মধ্যে এক প্রকার অসমাঞ্জস্যতা।

তবে কারন যাই হোকনা কেন, একটু চেষ্টা করলেই আমরা ব্যবসায়ের ক্যাশ ফ্লো কিছুটা হলে ও বাড়াতে পারবো। কি কি পদক্ষেপ আমরা অনুসরন করতে পারি তা নিচে আলোচনা করা হলো।


কাস্টমারদেরকে দ্রত টাকা দেয়ার জন্য উৎসাহিত করুন (Encourage customers to pay early)
মাঝেমধ্যেই দেখা যায় আমরা কাস্টমারের পেমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছে। এমন সিচুয়েশনে নিচের পদক্ষেপ অনুসরন করে আপনি কাস্টমারদের নিকট পাওনা অর্থ দ্রুত আদায় করতে পারেন।

  • কাস্টমারকে আগেই পন্য পাঠিয়ে না দিয়ে যখন সে ক্রয়ের জন্য পুর্ন প্রস্তুত থাকবে তখন ইনভয়েস তৈরি করে পন্য ডেলিভারি করা।
  • পেমেন্ট করার জন্য কাস্টমারকে একাধিক অপশন দেওয়া, যেমন, ক্রেডিট কার্ড, ক্যাশ, চেক ইত্যাদি।
  • যদি সম্ভব হয় দ্রুত পেমেন্ট করলে কিছু ডিস্কাউন্ট অফার করা যেতে পারে। যেমন দশ দিনের মধ্যে পে করলে । দশমিক ৫% ডিস্কাউন্ট।
  • বড় অর্ডারের ক্ষেত্রে অগ্রিম টাকা নেওয়ার চেষ্টা করা।
  • দেনা পাওনা নিয়মিত তদারকি করা। সকলকে তাগাদা দেওয়া।
  • কাস্টমারের যেকোন অভিযোগ দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা।
     

স্টাফিং এবং এ সংক্রান্ত ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজ করা (Manage staffing and cash flow)
কর্মীসংস্থানের ক্ষেত্রে নিচের পরিবর্তন গুলো কিছু পরিমান অর্থ সেভ করবে।

  • রোস্টার সিস্টেমে কর্মী সংস্থান করলে পিক টাইমে কর্মীদের সর্বোচ্চ সার্ভিস পাওয়া যায়। আবার ডিকলাইনিং আওয়ারে  খুব বেশি কর্মী বসিয়ে রাখতে হয়না।
  • কাস্টমারের পেমেন্ট না পাওয়া পর্যন্ত সেলস কমিশন না দেওয়া।
  • ক্যাশ ফ্লো বাড়ায় কর্মীদের এমন যেকোন কর্মকান্ডের জন্য পুরষ্কৃত করা। যেমন সেলস টার্গেট রিচ করা বা পাওনা অর্থ আদায় করা।


কোম্পানির স্টক এবং সাপ্লায়ারদের ম্যানেজ করা (Manage your stock and suppliers)
যে ধরনের সাপ্লাইজ গুলো থেকে আপনি এখনো অর্থ আদায় করতে পারছেননা সেগুলোর জন্য নিশ্চয়ই আপনি পে করতে চাইবেননা। যেমন আপনি র-ম্যটেরিয়ালস ক্রয় করলেন কিন্তু বিক্রীত ম্যানুফ্যাকচারড গুডসের টাকা এখনো হাতে পাননি। সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই র ম্যাটেরিয়ালসের টাকা পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য। তাই ইনকাম এবং খরচের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য আনতে হবে।

  • যেসব পন্যের স্টক ধীরে ধীরে বিক্রী হয় সেগুলো কম রাখুন বরংচ যেগুলো দ্রুত বিক্রী হয় সেগুলোতে শিফট করুন।
  • পন্যের স্টক কতটুকু আছে তা সব সময় মনিটর করুন। বিনা কারনে আগেভাগে স্টক করার দরকার নেই। এতে ক্যাশ ফ্লো র উপর নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট পড়বে।
  • এমন ধরনের সাপ্লাইয়ার খুজে বের করুন যারা সাপ্লাই করবে যখন আপনার দরকার তখনই। অর্থাৎ আপনার স্টক শেষ হলে তবে মাল সাপ্লাই করবে। বিনা কারনে স্টক স্টোর হাউজে পড়ে থাকবেনা ফলে ক্যাশ ফ্লো কিছুটা কন্ট্রোল হবে।
  • যদি বাকিতে মাল ক্রয় করার সুযোগ থাকে তাহলে এটার পুর্ন ব্যবহার করুন। কারন এটা একধরনের ইন্টারেস্ট ফ্রি লোন।
     

অন্যান্য অ্যাসেট ও ইনভেস্টমেন্ট বিবেচনা করা (Consider your other assets and investments)

  • অপ্রয়োজনীয় অ্যাসেট বিক্রি করা (Sell unnecessary assets)
    অনেক সময় ব্যবসায়ের অপ্রয়োজনীয় সম্পত্তি পড়ে থাকে। যেটা স্টোরেজ করা এবং ইন্স্যুরেন্স করার জন্য বাড়তি খরচ হয়। সেসব সম্পদ বিক্রী করা গেলে বাড়তি টাকা পয়সা আসবে সেই সাথে অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমে আসবে।
     
  • ব্যবসায়ের প্রয়োজনে অ্যাসেট লিজ নেওয়া(Leasing assets)
    যদি ব্যবসায়ে নতুন সম্পত্তির প্রয়োজন হয় তাহলে চেষ্টা করুন লিজ নেওয়ার ফলে ক্যাশ কম খরচ হবে।
     
  • অতিরিক্ত ক্যাশ ইনভেস্ট করা (Invest surplus cash)
    চেষ্টা করুন সুদ প্রোভাইড করে এমন ব্যাংক একাউন্ট ক্রিয়েট করার। ফলে অতিরক্ত ক্যাশ কিছু বাড়তি ইনকাম জেনারেট করবে।

 

কোম্পানির মার্কেটিং স্ট্রেটেজি রিডিফাইন করা (Refine your marketing strategy)
মার্কেটিং একটিভিটিজ আরো ফ্রুটফুল করলে আলতিমেটলি সেলস বাড়বে এবং ক্যাশ ফ্লোতে পজেটিভ ইম্প্যাক্ট পড়বে।

  • টার্গেট মার্কেটে ফোকাস করা (Focus on your target market)

শুরুতেই টার্গেট মার্কেট রিসার্চ ভালো করতে হবে। এর ফলে আপনি সাম্ভাব্য কাস্টমারের ব্যপারে ধারনা পাবেন যা বাকি সবকিছুকে সহজ করে দিবে।

রিসার্চে দেখা যায় যে ব্যবসা কাছে টার্গেট মার্কেটের ব্যপারে যত ভালো ধারনা রাখে তাদের মার্কেটিং খরচ তত কমে আসে। ধরেন আপনি ডায়াপার বিক্রি করেন এবং ফেসবুকে প্রোডাক্ট বুস্ট করবেন চাইলে দেশের সব মানুষকে টার্গেট করতে পারেন অথবা শুধু মায়েদের টার্গেট করতে পারেন। কোনটা বেশি ইফেক্টিভ। এছাড়া টার্গেট মার্কেট সেট করে মার্কেটিং করলে সাম্ভাব্য কাস্টমার আপনার প্রডাক্ট বা অফারিং এর ব্যপারে বেটার আইডিয়া পাবে।
 

  • কাস্টমাররা কি চায় তা বোঝা (Understand what the customer wants)

জানতে হবে আপনার অফার কৃত পন্য বাজারে কোন সমস্যার সমাধান করছে। যখন আপনি কাস্টমারের চাহিদা এবং চাহিদার কারন বুঝতে পারবেন তখন আরো ভালো ভাবে তাদের ইন্টারেস্ট সার্ভ করতে পারবেন। যা আল্টিমেটলি আপনার কাস্টমার বাড়াবে।
 

  • মার্কেটিং রেজাল্ট পরিমাপ করা (Measure your marketing results)

জানতে হবে আপনার কাস্টমার কোথা থেকে আসছে। তারা কী ফেসবুকের এড দেখে আসছে নাকি গুগলের সার্চ কনসোল ত্থেকে আসছে। যদি আপনি এটা ফিগার আউট করতে পারেন তাহলে অপ্রয়োজনীয় খরচ একদম কমে আসবে। যেমন ফেসবুক এড থেকে আপনার প্রডাক্ট কেউ না কিনলে আপনি কেন সেখানে এড দিবেন?
 

  • অনলাইন প্রেজেন্স বাড়ানো (Improve your online presence)

.যদি অনলাইন মার্কেটীং এ এখনো ইনভল্ভ না থাকেন এখনই অনলাইন মার্কেটিং এ খরচ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেন। অনেক ওয়েবসাইট দেখা যায় শুধু কোম্পানির ইনফরমেশন দিয়ে লোডেড থাকে। কিন্তু কাস্টমার কি আসলেই সেটা পড়তে চাচ্ছে? তারা আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে চাই। তাই বেশি বেশি সিটিএ বাটন ব্যবহার করেন ওয়েবসাইটে। তাহলে ভিজিটর প্রডাক্ট না কিনলে ও তারা ডেটা ব্যবহার করে একটা মডেল দাড় করাতে পারবেন যেটা ভবিষ্যতে সাহায্য করবে।

মার্কেটিং এ অনিয়মিত হলে চলবেনা তাহলে কাস্টমার আপনাকে ভুলে যাবে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইট ল্যটেস্ট ইনফো শেয়ার করে রেলিভেন্ট রাখুন। তাহলে কাস্টমারের সাথে এঙ্গেজ করতে পারবেন। আর যখনই কাস্টোমারের সাথে এঙ্গেজ হবেন তার আচরন সম্পর্কে ভালো ধারনা পাবেন। যা পরবর্তীতে আপনার মার্কেটিং খরচ কমাবে।
 

  • প্রোডাক্ট বা সার্ভিসগুলোর বান্ডেল তৈরি করে তা সেল করা (Bundle your sales)

স্টক যত দ্রুত আউট করে দিবেন ক্যাশ ফ্লো তত ভালো হবে। তাই চাইলে বান্ডেল অফারিং এর মাধ্যমে বেশি বেশি পন্য সেল করতে পারেন। ফলে দ্রুতই টাকা উঠে আসবে,।
 

  • কাস্টমারের প্রতি রেস্পন্সিভ হওয়া (Be responsive)

কাস্টমারের সব সমস্যার সমাধান করুন তাদের কথা শুনুন। অনাথায় তারা চলে যাবে। রিসার্চে দেখা যায় ৪৫ শতাংশের বেশি মানুষ যারা আগ্রহ প্রকাশ করে তারা আল্টিমেটলি কাস্টমারে কনভার্ট হয়ে যায়। যদি এই বেঞ্ছমার্ক রিচ করতে না পারেন বুঝে নে সমস্যা আপনার প্রসেসে।
 

যদি ফোনে কাস্টমারের এঙ্কোয়ারির এনাসার দিতে দিতে একদম বিরক্ত হয়ে যান তাহলে নিচের প্রশ্নগুলো করেন,

  • যদি ক্রেতা একই প্রশ্ন বারে বারে করে তাহলে একটা ওয়েবসাইট কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রশ্নগুলোর উত্তর সেট করে রাখা সম্ভব?
  • আপনার কি কোন ইমিএল এড্রেস কিংবা ওয়েব কন্ট্যাক্ট ফর্ম আছে যেটা কম গুরুত্বপুর্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যবহার হবে।
  • আপনার কি কাস্টমার এঙ্কোয়ারি সামলানোর জন্য কাউকে হায়ার করা উচিত?
     

ক্যাশ ফ্লো ফোরকাস্ট করা (Forecast your cash flow)
আপনার সেলস ট্রেন্ড এবং সামনে অপেক্ষমান খরচের ব্যপারে খোজ খবর রাখুন, এবং নিয়মিত ক্যাশফ্লো ফোরকাস্ট করুন ফলে নিকট ভবিষ্যতের সাম্ভাব্য ক্যাশ ফ্লো শর্টেজ ফেইজ ডিটেক্ট করতে পারবেন। আর যেকোন সমস্যা আগে ডিটেক্ট করতে পারলে সমাধান ও সহজ।

একবার ক্যাশ ফ্লো অনুমান হয়ে গেলে একটা প্রশ্ন এরাইজ করুন “ হোয়াট ইফ”। অর্থাৎ কোন একটা সিনারিও চেঞ্জ হলে আপনার ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট কেমন পারফর্ম করে যাচাই করুন। যেমন সেলস কমে গেলে ক্যাশ ফ্লোতে কেমন ইম্প্যাক্ট পড়ে।

আশাকরি এই আর্টিকেলটি পড়ে সবাই উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ।

Comments (0)