Published - Sun, 07 May 2023

পাইথন কি এবং এর ব্যবহার

পাইথন কি এবং এর ব্যবহার

আপনি যদি প্রোগ্রামিং সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে থাকেন কিংবা ডেটা এনালিস্ট হিসেবে নিজের পেশা গড়তে চান তাহলে পাইথন সম্পর্কে ধারণা রাখাটা আপনার জন্য অতীব জরুরি। আজকের এই আর্টিকেলে, পাইথন কী এবং পাইথন দিয়ে কী কী কাজ করা যায় সে সম্পর্কে জানবো। এছাড়াও পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষার সাথে সংশ্লিষ্ট পেশাগুলো কী কী সে সম্পর্কেও একটা ছোট্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। তো বেশি কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনা শুরু করা যাক।


পাইথন কী?
বর্তমান প্রযুক্তির দুনিয়ায় কয়েক শতাধিক প্রোগ্রামিং ভাষা রয়েছে, তবে তার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ভাষা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর stacStack Over Flow ওয়েবসাইটের একটি সার্ভে অনুযায়ী,  সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর মধ্যে পাইথন অন্যতম, সারাবিশ্বে এর অবস্থান চতুর্থ।

পাইথন (Python) হলো মূলত একটা উচ্চতর General-purpose প্রোগ্রামিং ভাষা। এখানে General Purpose বলতে এর বহুমুখী ব্যবহার যোগ্যতাকে বুঝাচ্ছে। পাইথন শুধু একটি নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য ব্যবহৃত হয় না, বরং এর ব্যবহার বহুমুখী। ইতোমধ্যে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় শতাধিক সেক্টরে, আর কী কী কাজে পাইথন ব্যবহার সম্ভব তা নির্ভর করছে মানুষের সৃজনশীলতার উপরে।

 

পাইথন কেন ব্যবহার করা হয়?
পাইথন ব্যবহার করা হয় এর বিশেষ কিছু সুবিধার কারণে। যেমন এটি সহজে ও অল্প সময়ে আয়ত্ত্ব করা যায়, এটির অনেক বেশি Library ও Framework রয়েছে, আরও রয়েছে জটিল এটা এনালাইসিস সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ইত্যাদি। এছাড়াও অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট, সায়েন্টিস্ট এর মতো নন-প্রোগ্রামাররাও পাইথন ব্যবহার করে খুব সহজে তাদের দরকারি কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে।

পাইথন কেন ব্যবহার করা হয় এই প্রশ্নের সবচেয়ে আদর্শ উত্তর হচ্ছে এর বহুমাত্রিক ব্যবহার যোগ্যতা। নিচের অংশে এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানবো।

 

পাইথন দিয়ে কী কী কাজ করা যায়?
বর্তমানে প্রচলিত প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর একটা সীমাবদ্ধ রয়েছে। তা হলো সেগুলো ব্যবহার করে শুধু গুটিকয়েক কাজ করা যায়, অর্থাৎ সেগুলো তৈরি-ই করা হয়েছিলো নির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রামিং টাস্ক সলভ করার জন্য।

তবে পাইথন গ্রোগ্রামিং ভাষার ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন। যেহেতু পাইথন progamming paradigm সাপোর্ট করে সেহেতু এটি দিয়ে অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান  করা যায়। এজন্য এটাকে general-purpose প্রোগ্রামিং ভাষা বলা হয়।


পাইথন দিয়ে করা যায় এমন কতগুলো কাজ হলো:

  • অ্যাপ ও ওয়েবসাইট তৈরি: বর্তমানে প্রোগ্রামারদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পাইথন। এতে Flask, Django ইত্যাদির মতো জনপ্রিয় Web framework থাকায় অনেক সহজেই পাইথন দিয়ে অ্যাপ ডেভেলপ করা যায়। এছাড়া ওয়েব ডেভেলপমেন্টের অধিকাংশ কাজই (যেমন: সার্ভার ইন্টারকানেক্টিং, ডেটা প্রসেসিং, ডেটাবেস তৈরি, সিকিউরিটি প্রদান ইত্যাদি) পাইথন দিয়ে করার সুযোগ থাকায় ওয়েবসাইট তৈরির জন্যও এটি বেশ জনপ্রিয়।
     
  • সিস্টেম স্ক্রিপ্টিং ও অটোমেশন: যে কাজগুলো আমাদের নিয়মিত করতে হয় সেগুলো যদি অটোমেশন করা যায় তাহলে অনেক সময় সাশ্রয় হয়ে যায়। আর এই অটোমেশনের জন্য কোড লেখাকে বলা হয় স্ক্রিপ্টিং। অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষার তুলনায় পাইথন ব্যবহার করে অতি দ্রুত ও অল্প কথায় স্ক্রিপ্ট তৈরি করা যায়। Content downloading, email sending, file converting, error finding ও text correction ইত্যাদির মতো দৈনন্দিন ব্যবহৃত টাস্কগুলোর অটোমেশন তৈরি করতে পাইথন ব্যবহার করা হয়।
     
  • মেশিন লার্নিং ও এআই: আধুনিক প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে মেশিন লার্নিং ও এআই (Artificial Intelligence) সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কার। ২০২২ সালের শেষের দিকে সারা বিশ্বজুড়ে তোলপার ফেলে দেওয়া AI প্রযুক্তি ChatGPT তৈরির পেছনে মূল প্রোগ্রামিং ভাষা হলো পাইথন। এতে রয়েছে TensorFlow, Kyras, Pytorch এর মতো অসংখ্য লাইব্রেরি, যেগুলো মেশিন লার্নিং ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপারদের জন্য কাজের বিশাল সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
     
  • ডেটা এনালাইসিস: জটিল সমীকরণ সমধান, ডেটা এনালাইসিস, ডেটা ম্যানুপুলেশন, ভিজুয়ালাইজেশন তৈরি ইত্যাদি জন্য ডেটা এনালিস্টসহ সংশ্লিষ্ট পেশায় জড়িতদের কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে পাইথন। এটি ব্যবহার করে Bar Graph, Pie Chart, Histogram, 3D Plot সহ অনেক ধরনের ডেটা ভিজুয়ালাইজেশন তৈরি করা যায়। এমনকি বেশিরভাগ Data Mining ও Data Analytics সফটওয়্যার তৈরি করা হয় পাইথন ব্যবহার করে।
     
  • সফটওয়্যার প্রোটোটাইপ টেস্টিং: যেকোনো সফটওয়্যার তৈরির ক্ষেত্রে কতগুলো পরীক্ষামূলক কাজের মধ্যে Build control, Bugs tracking and testing অন্যতম। আর এই কাজগুলোকে মূলত Software Prototype Testing বলা হয়। পাইথনে Green ও Requestium এর মতো টুল ব্যবহার করে নতুন কোনো সফটওয়্যার তৈরির কাজ সম্পন্ন করার পূর্বে সহজেই তার প্রোটোটাইপ টেস্টিং করা যায়।
     

পাইথন কেন এত জনপ্রিয়?
পাইথনের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা হয়ে ওঠার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু কারণ রয়েছে। নিচে পাইথনের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা সুবিধার কথা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

  • সহজবোধ্যতা: পাইথন এর syntax অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষার তুলনায় অনেক সহজ, ফলে নতুন যেকেউ সহজে ও অল্প সময়ের মধ্যেই এটি আয়ত্ত করতে পারে।
     
  • বহুমুখী ব্যবহার যোগ্যতা: এটি পাইথনের অন্যতম একটি সুবিধা। পাইথন ব্যবহার করে অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান ও প্রোগ্রাম তৈরি করা যায়।
     
  • দ্রুত কোডিং সুবিধা: পাইথনে Easy Debugging সুবিধা থাকার কারণে এটি ব্যবহার করে দ্রুত কোড লেখা যায়। ফলে সময় ও শ্রম সাশ্রয় হয়।
     
  • সুবিশাল লাইব্রেরি: পাইথনের আরেকটি সুবিধাজনক দিক হলো এটি একটি ওপেন সোর্স প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। অর্থাৎ যেকেউ এটাতে অবদান রাখতে পারে। পাইথনে অনেক বেশি ডকুমেন্টেশন, মডিউল ও সিন্ট্যাক্স গাইড রয়েছে। এছাড়া অনেক বড় বড় প্রোগ্রামার নানা সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেরা অনেক টুল ও কোড তৈরি করে রেখেছেন যাকে Archive of Modules And Libraries বলে। আর এগুলোর সবই বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।
     
  • সুবিশাল কমিউনিটি: পাইথন যেহেতু বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর একটি তাই এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাটাও বড়। এদের মাধ্যমে একটি বিশাল কমিউনিটি তৈরি হয়েছে যেখানে পাইথন শেখার গাইডলাইন, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেকেউ কোড লেখার সময় কোনো সমস্যায় আটকে পড়লে কমিউনিটি পোস্টের মাধ্যমে অন্যদের কাছ থেকে অল্প সময়ে তার সমাধান পেতে পারে।

Source: taglineinfotech.com

 

পাইথন শিখতে কত দিন সময় লাগে?
শুধু পাইথন নয়, যেকোনো প্রোগ্রামিং ভাষা কিংবা দক্ষতা অর্জন করতে আপনার কত দিন সময় লাগবে তার অধিকাংশটাই নির্ভর করে আপনার উপরে। অন্যদের তুলনায় আপনি নিয়মিত কতক্ষণ চর্চা করছেন, কী পরিমাণ এফোর্ট দিচ্ছেন এসবের নির্ভর করে সময় ভিন্ন হয়ে থাকে।

তবে আমি শুধু একটা ধারণা দিতে পারি। আপনি যদি পাইথন নিয়ে বেশ আগ্রহী হন এবং নিয়মিত ভালোমতো চর্চা করেন তাহলে এইটার বেসিক শিখতে মোটামুটি ২-৩ মাস মতো লাগতে পারে।

আর পাইথনের ব্যবহার যেহেতু অনেক বেশি বহুমুখী, সেহেতু আপনি কোন উদ্দেশ্যে পাইথন শিখছেন সেটাও এই শেখার সময় নির্ধারকের একটি উপাদান বিবেচিত হবে।


বর্তমানে কারা পাইথন ব্যবহার করে?
আগেই বলেছি, সারাবিশ্বে কয়েক শতাধিক প্রোগ্রামিং ভাষা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ কোম্পানি ও প্রোগ্রামারের কাছে এগুলোর মধ্যে পাইথন সবচেয়ে জনপ্রিয়। উপরে উল্লিখিত কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা পাইথন ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া Google, Meta, Intel, Nasa, IBM, Netflix, Spotify, JP Morgan Chase ইত্যাদির মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও পাইথনকে তাদের প্রোগ্রামিংয়ের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে।


পাইথন শিখে কীধরণের চাকরি পাওয়া সম্ভব?
আসলে এখনকার পৃথিবীতে এসেছে নির্দিষ্ট কোনো দক্ষতা শিখে কী কী কাজ পাওয়া সম্ভব তা নির্দিষ্ট করে বলা কিছুটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এটা সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে দক্ষতা অর্জনকারী ব্যক্তির সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার উপরে।

তবে সংশ্লিষ্ট দক্ষতার সাথে জড়িত এমন কিছু কাজ প্রচলিত থাকে।

পাইথনের ক্ষেত্রে তেমন কিছু পেশা নাম হলো:

  • App & Web Developer
  • Game Developer
  • Software Engineer
  • Ethical Hacker
  • Business Analyst
  • Data Analyst
  • Data Scientists
  • Data Journalist
  • QA Engineer
  • Cloud Architect


সারসংক্ষেপ
আপনি যদি পাইথন নিয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন এবং এই ভাষাটি শিখতে চান তাহলে আপনার মধ্যে অবশ্যই এর বেসিক কিছু জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আশা করি, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সেই জ্ঞানের বাধা দূর করতে পেরেছি। এছাড়া পাইথন সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Comments (0)