Published - Thu, 01 Jun 2023

একাউন্টিং প্রফেশনাল স্টাডির ক্ষেত্রে কোচিং নিয়ে কিছু কথা

একাউন্টিং প্রফেশনাল স্টাডির ক্ষেত্রে কোচিং নিয়ে কিছু কথা

সিএ বা সিএমএ পড়ার ক্ষেত্রে অনেককেই কোচিং নিয়ে নানান মন্তব্য করতে দেখা যায়। কেউ বলে কোচিংয়ের দরকার নেই, আবার কেউ বলে কোচিংয়ের দরকার আছে। আসলে কোনটি সঠিক? আজকে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।

আমি আইসিএমএবির একজন ফাইনাল লেভেলের স্টুডেন্ট। আমি ১৯০০ মার্কস কমপ্লিট করেছি। যার মধ্যে বেশিরভাগ সাবজেক্টই পাস করেছি চাকরির পাশাপাশি। আমি পাস করেছি নিজে নিজে পড়ে। কোন প্রাইভেট টিউশন সাপোর্ট নেয়নি। তাও আমি বলবো যে টিউশন সাপোর্টের প্রয়োজন আছে। তবে তা সবার জন্য নয়। আসুন নিচে ব্যাপারটি নিয়ে বিস্তারিত জানি।

 

টিউশন সাপোর্ট কাদের জন্য দরকার?
১। যাদের বেসিক দুর্বল বা নন-কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন, তাদের বেসিক ভাল মত ক্লিয়ার না হলে সিএ বা সিএমএ এর মত কঠিন পরিক্ষা পাস করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে একজন দক্ষ শিক্ষক বা মেন্টর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে।

২। অনেকের ক্ষেত্রেই সিএ বা সিএমএ তে যে ধরণের বই বা টপিক পড়ানো হয়, তা বুঝতে খুব কষ্ট হয়, বা বোঝা গেলেও তার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। পরে দেখা যায় যে, পুরো সিলেবাস সঠিক সময়ে কাভার করা সম্ভব হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন টপিক কঠিন লাগার কারণে শিক্ষার্থীরা সেই টপিক সঠিকভাবে না বুঝেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেই। ফলশ্রুতিতে পরিক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। এইসব ক্ষেত্রেও একজন মেন্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

৩। অনেকে আছেন যারা চাকরি করার পাশাপাশি সিএ বা সিএমএ পড়ছেন। সেক্ষেত্রে চাকরি করে রাতে বাসায় এসে এমনিতেই পড়ার সময় পাওয়া যায় কম। তার মধ্যে আবার যদি নিজে থেকে সব পড়তে হয়, সেক্ষেত্রে আরও কষ্ট। শেষমেশ দেখা যায় যে, কয়েকটা পরিক্ষা দেবার পর যখন আশানুরূপ ফল আসে না, তখন পড়াই বাদ দিয়ে দেবার মত অবস্থা এসে দাঁড়ায়। এইসব ক্ষেত্রেও একজন ভাল মেন্টর আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

৪। আবার অনেকে আছেন, কিভাবে করে কি পড়বে, কোন বই থেকে কোন পড়বে, ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সথিকভাবে অবগত নয়। আর অবগত থাকলেও কয়েকটি বই ম্যানেজ করে পড়া সম্ভব হয়ে উঠে না। এইসব ক্ষেত্রেও একজন ভাল মেন্টর আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

 

টিউশন সাপোর্ট কাদের জন্য প্রয়োজন নেই?
যাদের ক্যালিভার ভাল এবং নিজে নিজেই সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরণ অ্যানালাইসিস করার ক্ষমতা রাখে এবং নিয়মিত রুটিনমাফিক পড়ালেখা করতে পারে, তাদের জন্য টিউশন সাপোর্ট জরুরী নয়।

আমি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে প্রফেশনাল স্টাডি সম্পর্কিত ফ্রি ভিডিও ও গাইডলাইন দিয়ে আসছি, সেহেতু আমি দেখেছি অনেকেই আছেন যাদের নিজে নিজে স্টাডি করে এই প্রফেশনাল পরিক্ষা পাস করা খুব কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় বা হয়ত পর্যাপ্ত সময় পায়না। তাদের জন্য বিশেষ করে টিউশন সাপোর্ট একটি উপকারি ভূমিকা পালন করতে পারে।

 

একজন দক্ষ মেন্টরের টিউশন সাপোর্টের মাধ্যমে আপনাকে কিভাবে উপকৃত করতে পারেঃ
প্রফেশনাল স্টাডি, বিশেষ করে বাংলাদেশে সিএ বা সিএমএ করার ক্ষেত্রে অনেকেই শুধুমাত্র সঠিকভাবে প্রিপারেশন না নেয়ার অভাবে পরিক্ষাগুলোতে পাস করতে পারে না। সেজন্য অনেকে প্রেফার করে কোন মেন্টরের মাধ্যমে টিউশন সাপোর্ট নিয়ে পরীক্ষার প্রিপারেশন নেয়ার। এখানে আমি আলোচনা করবো যে  আপনি কিভাবে একজন দক্ষ মেন্টরের সাপোর্ট নিয়ে উপকৃত হতে পারবে এবং প্রফেশনাল পরিক্ষায় ভাল করতে পারেন।

১। সম্পূর্ণ সিলেবাসকে অ্যানালাইসিস করে যেই টপিকগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলর উপর গুরুত্ব দেয়া।

২। কঠিন টপিকসগুলোকে সহজ ভাষায় ও সহজ উদারহণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়া।

৩। যেসব সাবজেক্টে বিভিন্ন বই থেকে পড়তে হয়, সেইসব সাবজেক্টের একজন মেন্টর সবগুলো বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে একত্রিত করে নোটস তৈরি করে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করতে পারে।

৪। পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ম্যাথ্‌সগুলো সহজে বোঝা ও সলভ করার জন্য একজন মেন্টর ভূমিকা রাখতে পারে।

৫। অনেক টপিকস আছে যা সাধারনত বই পড়ে পড়ে বুঝতে সময় বেশি লাগে। অনেকের হাতে হয়ত এত সময় থাকে না। বিশেষ করে যারা চাকরি করে। একজন মেন্টর যদি জিনিসগুলো ক্লিয়ার করে বুঝিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে খুব সহজেই সেই টপিকগুলো একজন শিক্ষার্থী বুঝে ও শিখে নিতে পারে।

 

কোন টিউশন প্রভাইডারের কাছে যাওয়া উচিত হবে?
টিউশন প্রভাইডার নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদিও আমাদের দেশে সিএ বা সিএমএ এর টিউশন প্রভাইডারের সংখ্যা খুবই নগণ্য, তবে একটু এদিক সেদিক খুঁজলে কয়েকজনকে অবশ্যই পেয়ে যাবেন যারা টিউশন সাপোর্ট দিচ্ছে।

মেন্টর নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন কাউকে বেঁছে নেয়া উচিত যিনি যথেষ্ট যোগ্য, অর্থাৎ সিএ বা সিএমএ ফাইনাল লেভেল আছেন বা পাস করে মেম্বার হয়ে গেছেন এমন কাউকে। সেই সাথে তিনি কঠিন বিষয় সহজভাবে বোঝাতে পারেন কিনা, সেই বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে।

 

তার সাথে সাথে নিচের বিষয়গুলোও যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখেঃ

১. ক্লাস কি অফলাইনে হবে নাকি অনলাইনে?

২. অফলাইনে হলে কোথায় হবে? কোচিংয়ের স্থান আপনার জন্য কনভেনিয়েন্ট হবে কিনা তা অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে। তা না হলে আসা-যাওয়া করতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাবে?

৩. অনলাইনে হলে সেটি কিভাবে নেয়া হবে? কেননা, ম্যাথস রিলেটেড বিষয়গুলো অনলাইনে কিভাবে করানো হবে তা জানাও জরুরি? অনেকে আছেন যারা শুরু মাইক্রসফট পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড বা ওয়ার্ডে ম্যাথস করিয়ে কোর্স শেষ করে দেয়। তাই এসব ক্ষেত্রে কোন গ্রাফিক্স পেন ট্যাবলেট ব্যবহার করা হবে কিনা, তা জানাও জরুরি।

৪. ক্লাস লেকচারের জন্য কি পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড ব্যবহার করা হবে নাকি সরাসরি পিডিএড ও ওয়ার্ডের মাধ্যমে পড়ানো হবে, তাও জেনে নিয়ে হবে।

৫. অনলাইনে ক্লাসগুলো কি লাইভ হবে, নাকি রেকর্ডেড ক্লাস থাকবে, নাকি লাইভ ও রেকর্ডেড ক্লাসের কম্বিনেশন থাকবে?

অনলাইনে কোর্সগুলো যদি লাইভ ও রেকর্ডেড ক্লাসের কম্বিনেশনে হয়, তাহলে সেটি বেশি ভাল হয়। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দমত সময়ে রেকর্ডেড ক্লাসগুলো থেকে শুরু থেকেই প্রিপারেশন নেয়া শুরু করে দিতে পারে।

৬. টিউশন সাপোর্টের সাথে কি কোন নোটস দেয়া হবে কিনা? যদি না হয়, তাহলে আপনাকে ঐ সেই বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। তবে যদি আলাদাভাবে স্পেশাল নোটস দেয়া হয় যেখানে গুরুত্বপূর্ন বিষয়সমূহ ও বিভিন্ন প্রশ্নের সলিউশন থাকবে, তাহলে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল হয়।

৭. টিউশন সাপোর্টের সাথে কি কোন মডেল টেস্টের ব্যবস্থা আছে? যদি না থাকে, তাহলে এটি একটি সমস্যা কারণ মডেল টেস্ট দিলে আপনি আপনার লেভেল বুঝতে পারবেন। মডেল টেস্ট অফলাইন বা অনলাইন দুইভাবেই হতে পারে।

৮. লাইভ ক্লাসের রেকর্ডেড ভিডিও কি দিয়ে দেয়া হবে?

৯. অনলাইনের ক্লাসগুলো কোন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হবে কি না? যদি ওয়েবসাইটের মাধ্যেমে নেয়া হয়, তাহলে LMS (Learning Management System) এর সুবিধা পাওয়া যাবে এবং রেকর্ডেড ও লাইভ ক্লাসগুলো সহ ওভারঅল সাবজেক্ট প্রিপারেশন খুব সহজেই ম্যানেজ করা যাবে।

১০. প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য কতগুলো ক্লাস নেয়া হবে? ক্লাসের সময় কখন হবে? প্রতিটি ক্লাস কত ঘণ্টার হবে? এসব বিষয় সম্পর্কেও জানতে হবে।

 

টিউশন সাপোর্টের জন্য কত টাকা ফি হওয়া উচিত?
মেন্টরের যদি যথেষ্ট কোয়ালিফিকেশন থাকে এবং সহজে কোন টপিক বোঝানোর সক্ষমতাসহ ওভারঅল টিউশন প্রোগ্রামের প্যাকেজ ভাল হয়ে থাকে, তাহলে ফি বেশি হলেও তার কাছে যাওয়া উচিত। কেননা, সামান্য কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে এমন মেন্টরের কাছে না আবার চলে যান যেখান থেকে তেমন ভাল কোন আউটপুট পাবেন না। বেস্ট জিনিস পেতে হলে টাকা একটু বেশি খরচ হবেই।

 

আইসিএবি বা আইসিএমএবি থেকে কোন টিউশন সাপোর্ট দেয়া হয় না?
জ্বী, অবশ্যই দেয়া হয়। তবে, সত্য কথা হচ্ছে, প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট এর কোচিং এ আপনি পুরোপুরিভাবে সন্তুষ্ট হতে পারবেন না। এর কারণ হচ্ছে, সেখানে মূলত বেসিক বিষয়সমূহ কাভার করা হয়। সেই সাথে কোর্সের সময় কম থাকার কারণে সবগুলো টপিকের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হয় না।

তার সাথে সাথে ইনস্টিটিউট এর কোচিং এ যারা ক্লাস নেয়, তাদের বেশিরভাগই সিনিয়র পজিশনে আছেন। যার কারণে তারা অনেক সময় পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ার কারণে ঠিকমত ক্লাস নিতে পারে না।

এছাড়াও, সিএ বা সিএমএ প্রশ্ন দেখলে দেখা যায় যে, ইনস্টিটিউট এর কোচিং ক্লাসে যা যা পড়ায় বা পড়িয়েছে, তার থেকে বা সেই লেভেলের ডিফিকাল্টি থেকে তেমন প্রশ্ন আসেনি। যার কারণে একটি স্টুডেন্টকে এসব পরীক্ষা পাস করতে হলে আরো ফোকাস দিতে হয়। তখন অনেকে আবার ফেইল করে পড়ায় ছেলে দেয়

অনেকে হয়ত আমার এসব কথা সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। তবে আমি যা বলেছি, তা বলেছি সম্পূর্ণ বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে।

 

ইন্ডিয়াতে প্রফেশনাল ডিগ্রীর টিউশনের কি অবস্থা
আমরা যদি আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতের দিকে তাকায়, তাহলে আমরা দেখবো যে, সেখানে প্রফেশনাল সিএ, সিএমএ বা সিএস মেম্বারসরা টিউশন সাপোর্ট দিচ্ছে। তাদের প্রত্যেকেরই দেখা যাবে ইউটিউবে চ্যানেলও আছে। আমাদের মধ্যেও অনেকে আছে যারা সেই ইন্ডিয়ান প্রফেশনালসদের টিউশন সাপোর্টের ভিডিও ইউটিউবে দেখে আমাদের প্রফেশনাল সাবজেক্টস পাস করেছি, কিন্তু যখন নিজের দেশের কেউ টিউশন সাপোর্ট দিতে আসে, তখন বলি যে এগুলোর কোন দরকার নেই।

 

বিদেশের প্রফেশনাল ডিগ্রীগুলোর কি টিউশন সাপোর্ট আছে?
জী, হ্যাঁ। আপনি যদি CPA (AICPA),  CMA (IMA – USA), CFA, CIMA, ACCA, CIA (IIA), FRM ইত্যাদি বিদেশি প্রফেশনাল ডিগ্রীগুলোর কথা ধরেন, তাহলে দেখবেন সেইসব পরীক্ষার জন্য টিউশন সাপোর্ট দেয় এমন বেশি কিছু কোম্পানি আছে। যারা এইসব বিদেশি প্রফেশনাল ডিগ্রীগুলো পাস করেছে বা পরীক্ষা দিবে, তারাও ঐসব ডিগ্রীর জন্য যারা টিউশন সাপোর্ট দেয়, এমন জায়গা থেকে টিউশন সাপোর্ট নিয়েছে বা নিয়ে থাকে।

 

সারমর্ম
মূলত, কার টিউশন সাপোর্ট লাগবে, আর কার টিউশন সাপোর্ট লাগবে না, তা নির্ভর করবে শিক্ষার্থীর নিজের উপর। কেউ যদি মনে করে যে তার টিউশন সাপোর্টের দরকার নেই, তাহলে তো কোন কথাই নেই। উদাহরণসরূপ যেমন আমার কথা বলতে পারি। আবার অন্যদিকে যার টিউশন সাপোর্ট লাগবে, সে সেই সাপোর্ট নিতেই পারে। এক্ষেত্রে সিএ / সিএমএ এর টিউশন মানেই যে খারাপ জিনিস, এমনভাবে বলার কোন সুযোগ নেই।

Comments (1)

Asikur Rahman Rasel
Asikur Rahman Rasel
Helpful and suggestive article indeed. Thank you very much for sharing your experience as well as insights on this topic.
Thu, 01 Jun 2023